আলোচিত খবর

রাত হলে ঘুমানোর জন্য উড়ে বেড়ায় যে মাছ!

মাছ পানিতে বাস করে। পানিতেই তাদের বেড়ে ওঠা। অনেক মাছ

পানির মধ্যে থেকে লাফিয়ে ওঠে। অনেক সময় জালে আটকা পড়লে

মাছ পানির মধ্যেও লাফিয়ে শূন্যে উঠে পালানোর চেষ্টা করে। তারপর ধপাস করে পানিতেই পড়ে যায়। তবে আপনি অবাক হলেও ঘটনা কিন্তু সত্য। অর্থাৎ যে মাছকে আমরা শুধুই পানির জীব হিসেবে জানি তারও রয়েছে উড়ে বেড়ানোর ক্ষমতা। ইলিশ, কাতল, বোয়াল মাছের এই ক্ষমতা নেই। এমনকি এদেশে পাওয়া যায় এমন কোনো মাছই উড়তে পারে না। এই বিশেষ ক্ষমতা যে মাছের রয়েছে মৎস্য গবেষকরা নাম দিয়েছেন ফ্লাইং ফিস অর্থাৎ উড়ন্ত মাছ। আপনি উড়ুক্কু মাছও বলতে পারেন। পৃথিবীর অনেক জায়গায় ফ্লাইং ফিস ‘ফ্লাইং কড’ নামেও এরা পরিচিত। এরা এক্সোকোয়িটাইড গোত্রের। এক্সোকোয়িটাইড শব্দটি গ্রীক এক্সোকোয়িটাস শব্দ থেকে এসেছে। শব্দটি প্রাচীন গ্রীসে এমন সব প্রাণীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো যারা বাসস্থানের বাইরে ঘুমায়। প্রাচীনকালে মাছের এই উড়ার ক্ষমতার কারণে মনে করা হতো- এই মাছ সারাদিন

পানিতে বিচরণ করলেও রাতে ঘুমানোর জন্য তীরে উড়ে যায়। এই গোত্রের মাছেরা সাধারণ মাছের থেকে একটু ভিন্ন। এদের শারীরিক গড়নও সাধারণ মাছের থেকে আলাদা হয়ে থাকে। এরা অন্যান্য মাছের ন্যায় এদের পাখনা থাকলেও তা অনেকটা পাখির ডানার মতো। এই মাছের পৃষ্ঠদেশ স্ট্রিমলাইনড টর্পেডো আকৃতির এবং জোড়া লাগানো। এছাড়া এই মাছের বক্ষ-পাখনা থাকে অনেক বড়, যা তাদের বাতাসে ভেসে থাকতে সহয়তা করে। পৃথিবীতে ৯ ধরনের ৬৪ প্রজাতির উড়ুক্কু মাছ পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাগরগুলো ( বিষুব রেখার নিকটবর্তী সাগর) এই মাছের বিচরণক্ষেত্র। এই মাছ সাগরের পানির ওপরিভাগ থেকে ২০০ মিটার গভীর পর্যন্ত চলাচল করে বেড়ায়। তবে ওড়ার ক্ষমতা থাকলেও এসব মাছ পাখির মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশে ভেসে থাকতে পারে না। ফলে গবেষকরা এই ওড়াউড়িকে প্রকৃত উড্ডয়ন হিসেবে মানেন না। তারা একে বলেন গ্লাইডিং। আরো সহজ করে বললে, বাতাসে ভেসে থাকা বা বাতাসে ভর করে লাফিয়ে চলা। জল ছেড়ে উড়ুক্কু মাছের হাওয়ায় ভাসার পেছনে থাকে দুটি উদ্দেশ্য। প্রথমটা হল, প্ল্যাঙ্কটন। এই জাতীয় খাবার খেতে উড়ুক্কু মাছকে পানির ওপরে উঠতে হয়। দ্বিতীয়টা হলো, আত্মরক্ষা। বড় মাছ বিশেষ করে টুনা, ডলফিন, স্কুইডের তাড়া খেয়ে পালিয়ে বাঁচার জন্য জল ছেড়ে হাওয়ায় ভাসে তারা। উড়ুক্কু মাছের ওড়াউড়ি পাখির মতো না হলেও বেশ চমৎকার। প্রথমে মাছটি জলের ওপর লাফিয়ে ওঠে। এরপর জোরে, দ্রুত গতিতে সাগরের জলে লেজ দিয়ে আঘাত করে। সেকেন্ডে ৭০ বারের মতো সাগরপৃষ্ঠে লেজ দিয়ে আঘাত করার পর সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অনেকটা রানওয়েতে বিমান উড্ডয়নের মতো, এরপর মাছগুলো ডানা মেলে-অপরূপ সেই দৃশ্য। আবার কোন কোন উড়ুক্কু মাছের পায়ু-পাখনা অনেক বড় হয়। এদের লেজ বা পুচ্ছ পাখনাও অনেক বড় ও শক্ত, যা দিয়ে এরা জলে আঘাত করে ওড়ার গতিশক্তি লাভ করে। একটি উড়ুক্কু মাছ সাধারণত ৫০ মিটার বা ১৬০ ফুট পর্যন্ত ওপরে উঠতে পারে। আবার ক্ষেত্রবিশেষ এই দূরত্ব ৪০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। উড়ুক্কু মাছের ওঠার গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার। বাতাসের গতি বা ঢেউয়ের অবস্থার উপর নির্ভর করে এরা ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে।

Related Articles

Back to top button